Recent Posts

অফ-পেজ এসইওর প্রাথমিক ধারণা

আগের পর্বগুলোর মতো আজকের লেখাটিও অনেকটাই নতুনদের উদ্দেশে লেখা। এসইওর অফ-পেজ অংশটি অনেক বড় এবং দিন দিন এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমি চেষ্টা করেছি, অফ-পেজের জনপ্রিয় এবং কার্যকর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে। 

একটা কথা শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো যে এসইওর অফ-পেজের অংশটিতে গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং ভবিষ্যতে আরো আসবে, তবে বেসিক আইডিয়াগুলোর তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। কাজের ধরন বদলেছে, কিন্তু কাজ নয়।
অফ-পেজ এসইওকে অনেকেই আমরা ‘লিংক বিল্ডিং’ বলে থাকি। কেননা, অফ-পেজে আপনি যেসব কাজ করে থাকেন তার উদ্দেশ্য একটিই, তা হচ্ছে ব্যাকলিংক তৈরি করা।

বর্তমানে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এই অফ-পেজের বিভিন্ন অংশের বা পুরো অফ-পেজের কাজও পাওয়া যায় এবং এসব কাজের চাহিদাও রয়েছে। অফ-পেজ এসইওর কাজ হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর কাজও সাধারণত অনেক দিনের জন্য হয়ে থাকে।

যেহেতু অফ-পেজ এসইও বলতে লিংক বিল্ডিং বা ব্যাকলিংক তৈরি করাও বোঝায়, তাই আপনাদের ব্যাকলিংক কী, এটি জানতে হবে।

ব্যাকলিংক কী?
আপনি যখন অন্য কোনো সাইটে গিয়ে আপনার সাইটের লিংকটি দিয়ে আসবেন, এভাবে আপনি আপনার সাইটের জন্য একটি ব্যাকলিংক তৈরি করলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই লিংকটি আপনার সাইটের জন্য কতটা কার্যকর? এ ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে যে সাইট থেকে আপনি লিংকটি নিচ্ছেন, সে সাইটের মান কেমন এবং যে লিংকটি আপনি পাচ্ছেন, তার অ্যাট্রিবিউট কী? 

একটি লিংকের দুটি অ্যাট্রিবিউট থাকতে পারে—ডুফলো ও নোফলো। আগে সাধারণত কোনো সাইটের লিংকের জন্য ডুফলোকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ডুফলোর পাশাপাশি নোফলো লিংককেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। লিংক ডুফলো বা নোফলো যা-ই হোক না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই আপনি ভিজিটর পাবেন (যদি ভিজিটর আপনার লিংক দেখতে পেয়ে সেটিতে ক্লিক করে)। তবে মূল পার্থক্যটি হচ্ছে, ডুফলো হলে সার্চ ইঞ্জিন রোবট ওই লিংকের মধ্য দিয়ে আপনার পেজে আসবে, অর্থাৎ ওই পেজ থেকে লিংকজুস আপনার পেজে আসবে আর নোফলো হলে সার্চ ইঞ্জিন রোবট ওই লিংকের মধ্য দিয়ে আপনার পেজে আসবে না, অর্থাৎ ওই পেজ থেকে কোনো লিংকজুস আপনার পেজে আসবে না।
লিংকজুস হচ্ছে একটি লিংকের শক্তি (power of link), যা কি না একটি পেজ থেকে আরেকটি পেজে তৈরি করা লিংকের মাধ্যমেই পাস হয়ে থাকে। তবে এই লিংকজুস বেশি পাস হবে না কম হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে বেশকিছু প্যারামিটারের ওপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যে পেজ থেকে লিংকটি আসছে, সেটির পেজর‍্যাংক, লিংক অ্যাট্রিবিউট, লিংকের কোয়ালিটি, পেজে থাকা কনটেন্টের মান, টপিক রেলিভেন্সি ইত্যাদি।  

অফ-পেজ এসইওকে মূলত আমরা আমাদের সাইটের প্রচার/প্রচারণার জন্য ব্যবহার করে থাকি। আসুন, তাহলে আমরা অফ-পেজের কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করি।
১. সোশ্যাল শেয়ার : বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় (যেমন : ফেসবুক, টুইটার, গুগল বিজনেস পেজ ইত্যাদি) শেয়ারের মাধ্যমে আপনার সাইটের বা বিজনেসের প্রচারণা করতে পারবেন এবং এটি অনেক সক্রিয় একটি মাধ্যম কাঙ্ক্ষিত ট্রাফিক পাওয়ার জন্য। আপনি আপনার সাইটের আপডেটগুলো যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, তাহলে এটি আপনার সাইটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল সিগন্যাল বহন করবে, যা গুগলের অনেক র‍্যাংকিং ফ্যাক্টরের মধ্যে অন্যতম। 
২. ফোরাম পোস্টিং : অনলাইনে অনেক ফোরাম রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বা অনেক নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আপনি চাইলে আপনার সাইটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে একটি ভালো মানের ব্যাকলিংক পেতে পারেন। আপনি যদি ফোরামে একটি ভালো অবস্থানে আসতে পারেন, তাহলে এখান থেকে একটি ডুফলো ব্যাকলিংক পেতে পারেন, যদি সেই ফোরাম তার সিগনেচার অপশনে ডুফলো লিংক দেওয়ার অনুমতি দেয়।
৩. ডিরেক্টরি সাবমিশন : বর্তমানে অনেকে এ কথা বলে থাকেন, ডিরেক্টরি সাবমিশন এখন আর কার্যকর নয়। তবে আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। আমার মতে, ডিরেক্টরি সাবমিশন এখনো আপনার সাইটের জন্য অনেক কার্যকর। আপনি যদি ভালো মানের ডিরেক্টরি সাইটে আপনার সাইটটি লিস্টেড করাতে পারেন, তাহলে সেটি আপনার সাইটের জন্য অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ইয়াহুর DMOZ ডিরেক্টরির মধ্যে অন্যতম।
৪. সোশ্যাল বুকমার্কিং : বর্তমানে সোশ্যাল বুকমার্কিং জনপ্রিয় একটি মাধ্যম আপনার সাইটের ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও আপনাকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা, এখন এমন অনেক সোশ্যাল বুকমার্কিং সাইট রয়েছে, যেগুলো স্প্যামি। তাই আপনাকে মানসম্মত সোশ্যাল বুকমার্কিং সাইটগুলোতেই কাজ করতে হবে, যেমন : Digg, Delicious, StumbleUpon, Propeller ইত্যাদি।
৫. ফটো শেয়ারিং : ফটো শেয়ারিং খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম আপনার সাইটের প্রচারণার জন্য। ইউজারের সঙ্গে আপনার সাইটের ফটো শেয়ার করলে তারা এতে লাইক দেবে, কমেন্ট করবে। এতে করে আপনার সাইটের পরিচিতি বাড়বে। Flickr, Picasa, Photo Bucket এগুলো মানসম্মত ফটো শেয়ারিং সাইট।
৬. ভিডিও শেয়ারিং : ফটো শেয়ারিংয়ের মতোই ভিডিও শেয়ারিং খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। এখানে আপনি আপনার সাইটের ভিডিও শেয়ার করবেন। ট্রাফিক আপনার ভিডিও পছন্দ করলে তারা এটি শেয়ার করবে, কমেন্ট করবে এবং আপনি আরো ভিজিটর পাবেন। ভালো মানের কিছু ভিডিও শেয়ারিং সাইট হচ্ছে YouTube, Metacafe, Dailymotion  ইত্যাদি।   
৭. লোকাল বিজনেস লিস্টিং : এই প্রক্রিয়া লোকাল বিজনেস বা লোকাল পরিচিতির জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট টার্গেটেড ভিজিটর পেতে পারেন। এমন মানসম্মত কিছু লোকাল লিস্টিং/বিজনেস ডিরেক্টরি সাইট হচ্ছে Yellow Pages, Superpages, MojoPages ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো USA লোকাল লিস্টিং সাইট। প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা করে লোকাল লিস্টিং সাইট থাকে। তাই আপনি আপনার টার্গেটেড দেশের জন্য সে দেশের লোকাল লিস্টিং সাইটে আপনার বিজনেস লিস্টিং করুন। এর থেকে যেমন আপনার ব্যবসার প্রচারণা হচ্ছে, ঠিক তেমনি আপনার সাইটের জন্য তৈরি হচ্ছে একটি ব্যাকলিংক।
৮. আর্টিকেল সাবমিশন : আপনি বিভিন্ন জনপ্রিয় বিষয়ের ওপর আর্টিকেল লিখে বিভিন্ন আর্টিকেল সাবমিশন সাইট, যেমন : Ezine, Go Articles, Now Public ইত্যাদিতে সাবমিট করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার আর্টিকেলটি অবশ্যই মানসম্মত ও ইউনিক হতে হবে। তাহলে এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটের জন্য মানসম্মত ব্যাকলিংকের পাশাপাশি ভিজিটরও পাবেন।
৯. প্রেস রিলিজ : আপনি যদি কোনো বিজনেস বা সেবা দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার সাইটের জন্য বিভিন্ন প্রেস রিলিজ সাইটে (যেমন : Open PR, PR Leap ইত্যাদি) প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আপনার সাইটের প্রচারণা চালাতে পারবেন।
  
১০. প্রশ্ন-উত্তর সাইট : এটি একটি মানসম্মত ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি পন্থা। আপনি বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তর, যেমন : Quora, Yahoo Answer, Cha-Cha ইত্যাদি সাইটে গিয়ে আপনার নিশ/টপিক রিলেটেড বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে একটি মানসম্মত প্রোফাইল তৈরি করে তার পর এখান থেকে ভালো ব্যাকলিংক পেতে পারেন।

১১. ডকুমেন্ট শেয়ারিং : এমন অনেক প্রসিদ্ধ ডকুমেন্ট শেয়ারিং সাইট রয়েছে, যেমন : Google Docs, Slide Share ইত্যাদি সাইটে গিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট বা স্লাইড শেয়ার করে আপনার সাইটের পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবেন।
১২. Web 2.0 : আপনি আপনার মূল বা মানি সাইটকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন Web 2.0 (যেমন : Blogger, Wordpress, Tumblr ইত্যাদি) সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে আপনি আপনার নিজের সাইটের জন্য ভালো মানের ডুফলো ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারেন।
১৩. ব্লগ কমেন্ট : আপনি আপনার সাইটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য মানসম্মত ব্লগের আর্টিকেলে কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সাইটের জন্য ব্যাকলিংক পেতে পারেন। যদিও বর্তমানে অধিকাংশ ব্লগই নোফলো ব্যাকলিংক দিয়ে থাকে, তার পরও আপনি এখান থেকে কিছু ভিজিটর পেতে পারেন।
১৪. গেস্ট ব্লগিং : গেস্ট ব্লগিং এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন সাইট ওনার/মালিক তার সাইটে অন্যদের আর্টিকেল লেখার অনুমতি দিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে আপনি যে আর্টিকেলটি সাবমিট করবেন, সেটি সাইট ওনার/মালিক আগে চেক করে দেখবেন যে এটি কপি করা কোনো লেখা কি না বা এটি মানসম্মত কি না। তার পর সে তার সাইটে আপনার লেখাটি পাবলিশ করবে। তবে এভাবে আপনি অনেক ভালো মানের ব্যাকলিংক পেতে পারেন। 
আজ এ পর্যন্তই। ওপরের আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে অফ-পেজ এসইওর প্রাথমিক একটি ধারণা আপনাদের দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমি অবশ্যই এ বিষয়ে আরো বিশদ আলোচনা করব।